ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদকে সামনে রেখে কামারের দোকানগুলোর টুংটাং শব্দে সরগরম

মোঃ শাহনেওয়াজ, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪ ৫০ বার পঠিত

ঈদকে সামনে রেখে কালীগঞ্জের কামারেরা ব্যস্ত সময় পার করছে

স্বাধীনবাংলা টেলিভিশনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
সংবাদটি শেয়ার করুন :

মোঃ শাহনেওয়াজ, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে  বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কামারের দোকানগুলোর টুংটাং শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে। পবিত্র ঈদুল  – আযহা উপলক্ষে  রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। নাওয়া-খাওয়া ভূলে গিয়ে অবিরাম কাজ করছেন তারা।

তাছাড়া লোহা পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব ছুরি,দা,বঁটি,চাপাতি। পশু কোরবানির পাশাপাশি মাংস কাটার জন্য। এসব কিনতে কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এবছর এসব  সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করছেন ক্রেতারা।

কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা,ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা এখন বিড়ম্বনায় পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটার শব্দ। লোহার হাতুড়ি পেটায় ছড়াচ্ছে সফুলিঙ্গ। সেখানে যেন দিন-রাত, অবিরাম চলছে কাজ আর কাজ।কামাররা জানান, বছরের এগারো মাসে তাদের ব্যবসা হয় এক রকম আর কোনবানীর ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা  হয় আরেক রকম।

কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, স্প্রিং লোহা {পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো,দাম ও বেশি।

আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামুলক ভাবে কম এ্যাঙ্গেল,রড,স্টিং,রেলরাইনের লোহা,গাড়ির পাত ইত্যাদি অনেকে লোহা কামাদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহা ভেদে নির্ধারণ  করা হয়।

স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, বেশীরভাগ কাষ্টমার রেডিমেট জিনিস নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কামাররা জানান, লোহারর মানভেদে একটি দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা (পাকা লোহা)  আর কাঁচা লোহার দা ৫০০ থেকে ৩ হাজার, কুড়াল ৬০০ থেকে ১১শ,বটি ৩০০ থেকে ৮০০,চাপাতি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।তবে দেশিয় এসব দা-বটির পাশাপাশি চায়না থেকে আমদানি করা বিভিন্ন মান ও আকারের ছুরি-চাপাতিও বাজারে  অল্প দামে বিক্রি হচ্ছে।বক্তারপুর ইউনিয়ন বাসিন্দা কালীগঞ্জ বাজারের  কামার শ্রীদাম   জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা  আমার পেশা। বাপ দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত।

একটি মাঝাড়ি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।সারা দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমার কাজের  ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

আওড়াখালী বাজারের কামার শ্যমল জানান আমাদের পৈত্রিক সূত্রে  এই পেশায়  নিয়োজিত আছি,নিত্য প্রয়োজনীয়  উপকরন এর  মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই  আমাদের  তৈরী করা উপকরণ এ-র দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এভাবে লোহার  দাম বৃদ্ধি  হতে থাকলে সাধারণ  জনগণ  আমাদের  তৈরী করা  উপকরণ বিক্রি কম দামে  বিক্রি করলে আমাদের  বিপুল পরিমান লোকশান হবে।

বিল্লাল হোসেন  আমাদের  প্রতিনিধিকে জানান  গত বছরের  তুলনায় এই বছর লোকজন খুব ই কম এত জিনিস তৈরি  করে  এখন  কি ভাবে  আমাদের ধার দেনা পরিশোধ করবো,চিন্তার মধ্যে  আছি, বিভিন্ন  এনজিও থেকে লোন তুলে পুজি খাটিয়ে  জিনিস পত্র তৈরি করে এখন  পর্যন্ত আশানুরূপ খরিদদার পাচ্ছি না,আর ঈদের বাকী এক দিন,আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া কিছুই করার  নেই।

সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালোই হতো,তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পেশায় যারা জড়িত তাদের ঘুড়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না, তাই  সরকারের কাছে আকুল আবেদন  এই পেশায় নিয়োজিত ব্যাক্তিদের তালিকা তৈরি করে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে  এই পেশার লোকদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে পারে তার ব্যাবস্থা করার জন্য  আবেদন জানাই।

 

এসবিএন

ট্যাগস :

ঈদকে সামনে রেখে কামারের দোকানগুলোর টুংটাং শব্দে সরগরম

প্রকাশের সময় : ০৫:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
সংবাদটি শেয়ার করুন :

মোঃ শাহনেওয়াজ, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে  বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কামারের দোকানগুলোর টুংটাং শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে। পবিত্র ঈদুল  – আযহা উপলক্ষে  রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। নাওয়া-খাওয়া ভূলে গিয়ে অবিরাম কাজ করছেন তারা।

তাছাড়া লোহা পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব ছুরি,দা,বঁটি,চাপাতি। পশু কোরবানির পাশাপাশি মাংস কাটার জন্য। এসব কিনতে কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এবছর এসব  সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করছেন ক্রেতারা।

কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা,ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা এখন বিড়ম্বনায় পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটার শব্দ। লোহার হাতুড়ি পেটায় ছড়াচ্ছে সফুলিঙ্গ। সেখানে যেন দিন-রাত, অবিরাম চলছে কাজ আর কাজ।কামাররা জানান, বছরের এগারো মাসে তাদের ব্যবসা হয় এক রকম আর কোনবানীর ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা  হয় আরেক রকম।

কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, স্প্রিং লোহা {পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো,দাম ও বেশি।

আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামুলক ভাবে কম এ্যাঙ্গেল,রড,স্টিং,রেলরাইনের লোহা,গাড়ির পাত ইত্যাদি অনেকে লোহা কামাদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহা ভেদে নির্ধারণ  করা হয়।

স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, বেশীরভাগ কাষ্টমার রেডিমেট জিনিস নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কামাররা জানান, লোহারর মানভেদে একটি দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা (পাকা লোহা)  আর কাঁচা লোহার দা ৫০০ থেকে ৩ হাজার, কুড়াল ৬০০ থেকে ১১শ,বটি ৩০০ থেকে ৮০০,চাপাতি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।তবে দেশিয় এসব দা-বটির পাশাপাশি চায়না থেকে আমদানি করা বিভিন্ন মান ও আকারের ছুরি-চাপাতিও বাজারে  অল্প দামে বিক্রি হচ্ছে।বক্তারপুর ইউনিয়ন বাসিন্দা কালীগঞ্জ বাজারের  কামার শ্রীদাম   জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা  আমার পেশা। বাপ দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত।

একটি মাঝাড়ি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।সারা দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমার কাজের  ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

আওড়াখালী বাজারের কামার শ্যমল জানান আমাদের পৈত্রিক সূত্রে  এই পেশায়  নিয়োজিত আছি,নিত্য প্রয়োজনীয়  উপকরন এর  মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই  আমাদের  তৈরী করা উপকরণ এ-র দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এভাবে লোহার  দাম বৃদ্ধি  হতে থাকলে সাধারণ  জনগণ  আমাদের  তৈরী করা  উপকরণ বিক্রি কম দামে  বিক্রি করলে আমাদের  বিপুল পরিমান লোকশান হবে।

বিল্লাল হোসেন  আমাদের  প্রতিনিধিকে জানান  গত বছরের  তুলনায় এই বছর লোকজন খুব ই কম এত জিনিস তৈরি  করে  এখন  কি ভাবে  আমাদের ধার দেনা পরিশোধ করবো,চিন্তার মধ্যে  আছি, বিভিন্ন  এনজিও থেকে লোন তুলে পুজি খাটিয়ে  জিনিস পত্র তৈরি করে এখন  পর্যন্ত আশানুরূপ খরিদদার পাচ্ছি না,আর ঈদের বাকী এক দিন,আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া কিছুই করার  নেই।

সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালোই হতো,তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পেশায় যারা জড়িত তাদের ঘুড়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না, তাই  সরকারের কাছে আকুল আবেদন  এই পেশায় নিয়োজিত ব্যাক্তিদের তালিকা তৈরি করে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে  এই পেশার লোকদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে পারে তার ব্যাবস্থা করার জন্য  আবেদন জানাই।

 

এসবিএন