ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতীক, সাবেক যুগ্মসচিবঃ
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৮:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪ ১৪৭ বার পঠিত

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতীক, সাবেক যুগ্মসচিব

স্বাধীনবাংলা টেলিভিশনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
সংবাদটি শেয়ার করুন :

স্বাধীনবাংলা রির্পোটঃ

সাধারণ তামাক পণ্যের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট আজকাল তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ই-সিগারেট বা ভেপ হল হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি), এখানে তরল নিকোটিনকে ব্যাটারির মাধ্যমে উত্তপ্ত করে ব্যবহারকারী উৎপন্ন ধোঁয়া ফুসফুসে টেনে নেয়। এটিকে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসও বলা হয়। অনেকেই মনে করেন, ই-সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে বা অন্যান্য তামাক পণ্যের চেয়ে কম ক্ষতিকর। কিন্তু এই ধারণার সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ক্ষতিকর।

ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস ব্যবহারের স্বাস্থ্যক্ষতি আমলে নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ এগুলো নিয়ন্ত্রণে/বন্ধে ইতোমধ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়লেও এগুলো নিয়ন্ত্রণে/বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের পদ্ধতি ও ব্যবহার, বিপণন কৌশল, তামাকাসক্তি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কৌশলি প্রচার-প্রচারণার কারণে এসব পণ্যের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বর্তমানে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস বিক্রয় নিষিদ্ধ কেন জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত  WHO Report on Global Tobacco Epidemic ২০১৯ এ, ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৬ এ ই-সিগারেটসহ নিকোটিনযুক্ত সকল পণ্যকে ‘অনিরাপদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।  বিশেষ করে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং-সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মহামারির আকার ধারণ করলে এই ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসগুলোর সত্যিকারের চেহারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ফেব্রুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ফুসফুসজনিত রোগে ভর্তি হওয়া মোট ২,৮০৭ জন রোগী এবং ৬৮ জন ই-সিগারেট ও ভ্যাৃপিংয়ের সাথে জাড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছে।

মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। উদ্ভাবনী কৌশল এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কিশোর এবং তরুণদের মাঝে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশে এসব পণ্যের ব্যবহার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে আমেরিকায় স্কুল পড়ুয়া তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহার ৭৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।

তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট

২০১৭ সালে পরিচালিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের হার ০.২ শতাংশ।  সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠির ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে।  অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সময়কাল অতিবাহিত করছে যেখানে, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠির তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির সংখ্যা বেশি।  এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট জনগোষ্ঠির অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তামাক কোম্পানিগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠিকে যেকোন উপায়ে তামাকপণ্য ও ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট এ আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য তারা ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, ভেপ ইত্যাদিকে সিগারেটের ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে ভোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে।

বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর ব্যবহার তরুণ এবং যুব সমাজের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, বিভিন্ন মার্কেট এবং রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা ভ্যাপিং ক্লাবে এসব পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকহারে চোখে পড়ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিক্রয় কেন্দ্র। অনলাইন এবং ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী নিয়ে আলোচনা, বিক্রয় ও হাতবদল হচ্ছে। তবে এসব পণ্য ব্যবহারের মাত্রা কতটা বিস্তার লাভ করেছে সে বিষয়ে সবশেষ কোন গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত নেই। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার মাধ্যমে ইমার্জিং টোবাকো প্রোডাক্ট ব্যবহারে প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন।

ই-সিগারেট এবং এইচটিপি বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুফল: বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

ই-সিগারেট এবং এইচটিপি বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে তরুণ এবং কিশোর বয়সিদের ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ইতোমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ কমপক্ষে ২৪টি দেশ এসব পণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন অপপ্রচার ও কৌশলী ভূমিকার কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এই তামাক পণ্যের প্রতি তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান সম্বলিত ই-সিগারেট বাংলাদেশে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এমতবস্থায় যথাযথ আইনের অনুপস্থিতি ই-সিগারেটের প্রাদুর্ভাব আরও মারাত্মকভাবে বাড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ই-সিগারেটের আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার বন্ধ করা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতীক, সাবেক যুগ্মসচিব

 

ট্যাগস :

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন

প্রকাশের সময় : ০৫:১৮:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
সংবাদটি শেয়ার করুন :

স্বাধীনবাংলা রির্পোটঃ

সাধারণ তামাক পণ্যের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট আজকাল তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ই-সিগারেট বা ভেপ হল হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি), এখানে তরল নিকোটিনকে ব্যাটারির মাধ্যমে উত্তপ্ত করে ব্যবহারকারী উৎপন্ন ধোঁয়া ফুসফুসে টেনে নেয়। এটিকে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসও বলা হয়। অনেকেই মনে করেন, ই-সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে বা অন্যান্য তামাক পণ্যের চেয়ে কম ক্ষতিকর। কিন্তু এই ধারণার সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ক্ষতিকর।

ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস ব্যবহারের স্বাস্থ্যক্ষতি আমলে নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ এগুলো নিয়ন্ত্রণে/বন্ধে ইতোমধ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়লেও এগুলো নিয়ন্ত্রণে/বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের পদ্ধতি ও ব্যবহার, বিপণন কৌশল, তামাকাসক্তি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কৌশলি প্রচার-প্রচারণার কারণে এসব পণ্যের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বর্তমানে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস বিক্রয় নিষিদ্ধ কেন জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত  WHO Report on Global Tobacco Epidemic ২০১৯ এ, ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৬ এ ই-সিগারেটসহ নিকোটিনযুক্ত সকল পণ্যকে ‘অনিরাপদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।  বিশেষ করে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং-সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মহামারির আকার ধারণ করলে এই ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসগুলোর সত্যিকারের চেহারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ফেব্রুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ফুসফুসজনিত রোগে ভর্তি হওয়া মোট ২,৮০৭ জন রোগী এবং ৬৮ জন ই-সিগারেট ও ভ্যাৃপিংয়ের সাথে জাড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছে।

মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। উদ্ভাবনী কৌশল এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কিশোর এবং তরুণদের মাঝে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশে এসব পণ্যের ব্যবহার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে আমেরিকায় স্কুল পড়ুয়া তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহার ৭৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।

তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট

২০১৭ সালে পরিচালিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের হার ০.২ শতাংশ।  সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠির ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে।  অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সময়কাল অতিবাহিত করছে যেখানে, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠির তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির সংখ্যা বেশি।  এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট জনগোষ্ঠির অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তামাক কোম্পানিগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠিকে যেকোন উপায়ে তামাকপণ্য ও ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট এ আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য তারা ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, ভেপ ইত্যাদিকে সিগারেটের ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে ভোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে।

বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস এর ব্যবহার তরুণ এবং যুব সমাজের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, বিভিন্ন মার্কেট এবং রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা ভ্যাপিং ক্লাবে এসব পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকহারে চোখে পড়ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিক্রয় কেন্দ্র। অনলাইন এবং ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী নিয়ে আলোচনা, বিক্রয় ও হাতবদল হচ্ছে। তবে এসব পণ্য ব্যবহারের মাত্রা কতটা বিস্তার লাভ করেছে সে বিষয়ে সবশেষ কোন গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত নেই। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার মাধ্যমে ইমার্জিং টোবাকো প্রোডাক্ট ব্যবহারে প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন।

ই-সিগারেট এবং এইচটিপি বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুফল: বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা

ই-সিগারেট এবং এইচটিপি বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলে তরুণ এবং কিশোর বয়সিদের ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়তা করবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ইতোমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ কমপক্ষে ২৪টি দেশ এসব পণ্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন অপপ্রচার ও কৌশলী ভূমিকার কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এই তামাক পণ্যের প্রতি তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান সম্বলিত ই-সিগারেট বাংলাদেশে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এমতবস্থায় যথাযথ আইনের অনুপস্থিতি ই-সিগারেটের প্রাদুর্ভাব আরও মারাত্মকভাবে বাড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ই-সিগারেটের আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার বন্ধ করা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতীক, সাবেক যুগ্মসচিব