ঢাকা ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০০ বছরের পুরনো জোড়া শিব মন্দির খুলনার

স্বাধীন বাংলা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান, খুলনা
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৯৮ বার পঠিত
স্বাধীনবাংলা টেলিভিশনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
সংবাদটি শেয়ার করুন :

স্বাধীনবাংলা,বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান,খুলনা।
খুলনার ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মন্দির জোড়া শিবমন্দির। খুলনা রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ভৈরব নদের পাড়ে এ মন্দির অবস্থিত। নানা কারণে দীর্ঘকাল এ মন্দির পরিত্যাক্ত ছিল। ১৯৯৯ সালে শ্রী শ্যামা পূজা (কালী পূজা) অনুষ্ঠানের মাধমে মন্দিরের পুনঃসংস্কার ও মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে এখানে নিয়মিত পূজা অর্চনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশের কয়েকটি বিখ্যাত মন্দিরের মধ্যে একটি খুলনার প্রাচীন জোড়া শিবমন্দির। প্রাচীন এ মন্দির লাগোয়া জোড়া বটগাছ নিয়ে নানা গল্প-কাহিনী লুকিয়ে আছে নানা । প্রায় ৩২৭ বছরের পুরানো এ জোড়া শিবমন্দির ও বিশাল আকৃতির প্রায় ৫০০ বছরের অধিক পুরানো জোড়া বটগাছ।
মন্দিরের দেয়ালে লেখা রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার নাম কৃষ্ণ রামবসু। এছাড়া একই সঙ্গে দেয়ালে জোড়া শিব মন্দিরের দাতাদের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ ঘুরে দেখে আসতে পারেন প্রাচীন স্থাপত্যের এ নিদর্শনটি। গাছ-গাছালির ছায়া ঘেরা প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে অনেকে বিশ্রাম নেয়। কেউ কেউ জোড়া বটবৃক্ষের নিচে পূজা করেন। পেছনের গেট থেকে এসে অনেকে মন্দির এরিয়ার টিউবওয়েল থেকে পানি নেন। মন্দিরের পাশে পুরোহিতের থাকার ঘর রয়েছে। জোড়া শিব মন্দিরের তিনটি গেট ও চারিদিকে প্রাচীর রয়েছে।
মন্দিরটির ইতিহাস সম্পর্কে আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী বলেন, খুলনা মহানগরীর ৫ নম্বর ঘাটের কাছে পাশাপাশি দুটি পূর্বমুখী শিবমন্দির বাংলা ১৩৪৩ সালে স্থাপন করেন বলদেব আগরওয়ালা নামের এক মাড়ওয়ারি। আবার কেউ কেউ দাবি করেন দেওয়ান শ্রীকৃষ্ণ রামবসু নামে এক ব্যক্তি বাংলা ১১০৪ সালে এ দুটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মন্দির দুটির মধ্যে কালো পাথরে নির্মিত দুটি শিবলিঙ্গ আছে। খুলনা জেলার প্রত্ননিদর্শন সম্বলিত ৭৪টি প্রত্নস্থলের মধ্যে একটি প্রত্নস্থল হলো এ জোড়া শিবমন্দির।
দেবী প্রষাদ ঘোষ মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বলেন, এখানে মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে শিবরাত্রি উৎসব ও চৈত্র মাসের শেষ সোমবার শিব বিগ্রহে জলদান অনুষ্ঠান। কয়েক বছর স্টেট অব শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের পক্ষ থেকে এ মন্দিরের পূজা-অর্চনার খরচের জন্য মাসিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ভক্ত ও শুভার্থীদের অর্থে মন্দিরের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্বজিৎ কাঞ্জিলাল ভোলা মন্দিরের পুরোহিত বলেন, এ জোড়া শিবমন্দির খুলনার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির। প্রায় ৫০০ বছর বয়স মন্দিরের পাশের জোড়া বটগাছটির । কথিত আছে বটগাছ দুটির একটি স্বামী ও অপরটি স্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছি। মন্দিরের বয়স ৩২২ বছর হয়েছে। মন্দিরের ভেতর দুই বিঘার মতো জায়গা আছে। মন্দিরের এরিয়ার মধ্যে একটি ঘের ছিল। এখানে কালীপূজা, মনসা পূজা, স্বরসতী পূজা, চৈত্র মাসের শেষ সোমবার পূজা হয়। শিব চতুর্দশীতে শিবের মাথায় জল ঢালা হয়। দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক ও পূণ্যার্থী পূজার সময় আসেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার জোড়া শিবমন্দির দখল করে আস্তানা বানিয়ে ছিলেন। ভয়ে তখন মন্দিরে কেউ আসতেন না। একপর্যায়ে মন্দির দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সেখানে পূজা-অর্চনা, নামযজ্ঞ, কীর্তন, ধর্মীয় শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি রহিত হয়। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর ২০০২ সালে খুলনার তৎকালীন মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমান মন্দিরের পাশেই একটি নলকূপ স্থাপন করে দেন এবং ২০০৩ সালে মন্দির সংস্কারকার্য সম্পাদনে নামফলক স্থাপন করেন।

কবি ও লেখক এ কে আজাদ বলেন, মন্দির দুটির উত্তর দিকে একটি বিশাল দিঘি ছিল। দিঘিতে একসময় শান বাঁধানো ঘাট ছিল। জনশ্রুতি আছে, বাংলা ১৩৪৩ সনে জনৈক বলদেব আগরওয়ালা নামে একজন মাড়োয়ারি এ স্থানটিতে একটি বাগান নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে বাগানটির কোনো চিহ্ন নেই। তাছাড়া ১৮৮০ সালে খুলনা রেলস্টেশন তৈরির সময় সংলগ্ন দিঘিটির একাংশ ভরাট করে ফেলা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে মন্দির পাশে একটি পাঠশালা ছিল বলেও জানা গেছে।

ট্যাগস :

৩০০ বছরের পুরনো জোড়া শিব মন্দির খুলনার

প্রকাশের সময় : ১১:৪৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সংবাদটি শেয়ার করুন :

স্বাধীনবাংলা,বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান,খুলনা।
খুলনার ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মন্দির জোড়া শিবমন্দির। খুলনা রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ভৈরব নদের পাড়ে এ মন্দির অবস্থিত। নানা কারণে দীর্ঘকাল এ মন্দির পরিত্যাক্ত ছিল। ১৯৯৯ সালে শ্রী শ্যামা পূজা (কালী পূজা) অনুষ্ঠানের মাধমে মন্দিরের পুনঃসংস্কার ও মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে এখানে নিয়মিত পূজা অর্চনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশের কয়েকটি বিখ্যাত মন্দিরের মধ্যে একটি খুলনার প্রাচীন জোড়া শিবমন্দির। প্রাচীন এ মন্দির লাগোয়া জোড়া বটগাছ নিয়ে নানা গল্প-কাহিনী লুকিয়ে আছে নানা । প্রায় ৩২৭ বছরের পুরানো এ জোড়া শিবমন্দির ও বিশাল আকৃতির প্রায় ৫০০ বছরের অধিক পুরানো জোড়া বটগাছ।
মন্দিরের দেয়ালে লেখা রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার নাম কৃষ্ণ রামবসু। এছাড়া একই সঙ্গে দেয়ালে জোড়া শিব মন্দিরের দাতাদের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ ঘুরে দেখে আসতে পারেন প্রাচীন স্থাপত্যের এ নিদর্শনটি। গাছ-গাছালির ছায়া ঘেরা প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে অনেকে বিশ্রাম নেয়। কেউ কেউ জোড়া বটবৃক্ষের নিচে পূজা করেন। পেছনের গেট থেকে এসে অনেকে মন্দির এরিয়ার টিউবওয়েল থেকে পানি নেন। মন্দিরের পাশে পুরোহিতের থাকার ঘর রয়েছে। জোড়া শিব মন্দিরের তিনটি গেট ও চারিদিকে প্রাচীর রয়েছে।
মন্দিরটির ইতিহাস সম্পর্কে আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী বলেন, খুলনা মহানগরীর ৫ নম্বর ঘাটের কাছে পাশাপাশি দুটি পূর্বমুখী শিবমন্দির বাংলা ১৩৪৩ সালে স্থাপন করেন বলদেব আগরওয়ালা নামের এক মাড়ওয়ারি। আবার কেউ কেউ দাবি করেন দেওয়ান শ্রীকৃষ্ণ রামবসু নামে এক ব্যক্তি বাংলা ১১০৪ সালে এ দুটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মন্দির দুটির মধ্যে কালো পাথরে নির্মিত দুটি শিবলিঙ্গ আছে। খুলনা জেলার প্রত্ননিদর্শন সম্বলিত ৭৪টি প্রত্নস্থলের মধ্যে একটি প্রত্নস্থল হলো এ জোড়া শিবমন্দির।
দেবী প্রষাদ ঘোষ মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বলেন, এখানে মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে শিবরাত্রি উৎসব ও চৈত্র মাসের শেষ সোমবার শিব বিগ্রহে জলদান অনুষ্ঠান। কয়েক বছর স্টেট অব শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের পক্ষ থেকে এ মন্দিরের পূজা-অর্চনার খরচের জন্য মাসিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ভক্ত ও শুভার্থীদের অর্থে মন্দিরের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্বজিৎ কাঞ্জিলাল ভোলা মন্দিরের পুরোহিত বলেন, এ জোড়া শিবমন্দির খুলনার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির। প্রায় ৫০০ বছর বয়স মন্দিরের পাশের জোড়া বটগাছটির । কথিত আছে বটগাছ দুটির একটি স্বামী ও অপরটি স্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছি। মন্দিরের বয়স ৩২২ বছর হয়েছে। মন্দিরের ভেতর দুই বিঘার মতো জায়গা আছে। মন্দিরের এরিয়ার মধ্যে একটি ঘের ছিল। এখানে কালীপূজা, মনসা পূজা, স্বরসতী পূজা, চৈত্র মাসের শেষ সোমবার পূজা হয়। শিব চতুর্দশীতে শিবের মাথায় জল ঢালা হয়। দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক ও পূণ্যার্থী পূজার সময় আসেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার জোড়া শিবমন্দির দখল করে আস্তানা বানিয়ে ছিলেন। ভয়ে তখন মন্দিরে কেউ আসতেন না। একপর্যায়ে মন্দির দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সেখানে পূজা-অর্চনা, নামযজ্ঞ, কীর্তন, ধর্মীয় শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি রহিত হয়। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর ২০০২ সালে খুলনার তৎকালীন মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমান মন্দিরের পাশেই একটি নলকূপ স্থাপন করে দেন এবং ২০০৩ সালে মন্দির সংস্কারকার্য সম্পাদনে নামফলক স্থাপন করেন।

কবি ও লেখক এ কে আজাদ বলেন, মন্দির দুটির উত্তর দিকে একটি বিশাল দিঘি ছিল। দিঘিতে একসময় শান বাঁধানো ঘাট ছিল। জনশ্রুতি আছে, বাংলা ১৩৪৩ সনে জনৈক বলদেব আগরওয়ালা নামে একজন মাড়োয়ারি এ স্থানটিতে একটি বাগান নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে বাগানটির কোনো চিহ্ন নেই। তাছাড়া ১৮৮০ সালে খুলনা রেলস্টেশন তৈরির সময় সংলগ্ন দিঘিটির একাংশ ভরাট করে ফেলা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে মন্দির পাশে একটি পাঠশালা ছিল বলেও জানা গেছে।