স্বাধীনবাংলা, ডেস্ক নিউজঃ
গত অর্থবছরে সরকার প্রচুর রাজস্ব আদায় করবে বলে ধারণা করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় এই টাকা আসবে বলে ধারণা করেছিলেন তিনি। এরই সূত্র ধরে গত বাজেটের আকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিলেন তিনি। তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
তবে কোনোকিছুই বিদায়ী অর্থমন্ত্রীকে বাজেট বড় করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তাফা কামাল ছয় মাস সময় পেয়েছিলেন। তার আনীত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দেয়নি। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে শেষ পর্যন্ত ঋণের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়েছে। এই ঋণের বড় অংশই এসেছে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে। বিদেশি ঋণও নিতে হয়েছে বড় পরিমাণে। ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে সুদ পরিশোধে, যে ধারা চলবে আগামী অর্থবছরও।
বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ এবারের বাজেটের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে সরকার। অর্থনীতির যে সংকট, তা দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে।
বাইরের অনেক কারণ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কারণেও সরকারকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সবাই আশা করছে নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার আনীত বাজেটে এমন কিছু করবেন যা দেশকে এই সংকট থেকে মুক্তি দেবে।
সবার আগে মূল্যস্ফীতি থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশের বেশি। শুধু খাদ্য কিনতে গিয়েই বেশির ভাগ মানুষ তাঁদের আয়ের বড় অংশ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার এক দুরূহ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু এর জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো এসেছে বছরের শেষ দিকে। সুতরাং বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হয়েছে সীমিত আয়ের মানুষ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত নীতিগুলো তেমন একটা কাজে আসেনি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ালেও বাংলাদেশ সরকার এমনটি করেনি। শেষমেষ অনেক দেরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সুদের হার বাড়ানোর সাথে সাথে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া লক্ষ্য পূরণ করতে শুল্ক বাড়ছে অনেক পণ্যে। দামি ডলার, ক্রমবর্ধমান সুদহার ও শুল্ক বৃদ্ধি—এই তিন বিষয় পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব রাখবে। ফলে বাজেটীয় কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এখন অন্তত সাফল্যের মুখ দেখবে বলে মনে হচ্ছে না। দরকার হবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সে পথে সরকার যাবে কি না, তা জানতে মানুষ আজ অর্থমন্ত্রীর দিকে নজর রাখবেন।
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীর জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বৃদ্ধি। প্রতিনিয়তই কমছে রিজার্ভ। আমদানি এখনো নিয়ন্ত্রিত খাত। মাত্র তিন মাসেরও কম সময়ের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। একমাত্র সিলভার লাইনিং প্রবাসী আয়। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে কিছুটা হলেও বেড়েছে রেমিট্যান্স। অন্যদিকে সামান্য হলেও ইতিবাচক ধারায় ছিল রপ্তানিও। কিন্তু মে মাসের রপ্তানি আয় শুধুই কপালের ভাঁজ বাড়াচ্ছে। দায় পরিশোধে বাংলাদেশের সামর্থ্যের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা কেবলই কমছে। বৈশ্বিক বড় রেটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের রেটিং অবনমন করেছে।
এবারের বাজেটের আকার গত বাজেটের চাইতে ছোটো হবে বলে জানা গেছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে নতুন বাজেট গত বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ছোটই থাকবে। গত মে মাসেই মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। সুতরাং সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে বরাবরের মতো রক্ষা করতে হবে বড় খেলোয়াড়দের স্বার্থও।
আজকের বাজেটে দেখার বিষয় হবে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংকটের মধ্যে যখন সংকোচনমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে আর কী প্রস্তাব করবেন মন্ত্রী।
এসবিএন